বিনম্র শ্রদ্ধা শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা


 মুকুল কান্তি ত্রিপুরা

“যেতে নাহি দিব । হায় , তবু যেতে দিতে হয় , তবু চলে যায় ।” বিদায়ের এমন উক্তিটিতে  যেন বাণী চিরন্তনের সুর বাঁজে বারংবার। হোক না কঠিন, তবুও সত্য । সময় ফুরিয়ে গেলে সকলেরই একদিন পা দিতে হয় ঐ প্রান্তে। যেখানে এ পাড়ের মায়ার জালও আটকাটে পারে না কাউকে। কালের পরিক্রমায় দেখতে দেখতে দু’টি বছর কেটে গেল আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আমার মায়ের দাদু-দাদীর প্রজন্মের এক অন্যতম মহান ব্যক্তি শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা । যাঁকে আমি আয়ং বলেই সম্বোধন করতাম।  পৃথিবীর বুকে নেওয়া এত বছরের  নিশ্বাস ছেড়ে দিতে হয়েছিল বিগত ৬ জানুয়ারি, ২০১৯ খ্রি. তারিখে তাঁকে। আজ  এই মহান ব্যক্তির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা। 
শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা

 ছোটবেলায় আমার মা (মনিকা ত্রিপুরা) আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে যতগুলো গল্প শোনাতেন তাঁর অনেক অংশ জুড়েই ছিলেন শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা এবং তাঁর পরিবার পরিজন। মায়ের দাদুর ভাই-বোনদের মধ্যে বোধহয় এই দাদুর সাথেই তাঁর সখ্যতা বেশি ছিল। তাই মায়ের সাথে খাগড়াছড়ি শহরে আসা মানেই কিছু সময়ের জন্য হলেও সেখানে সময় কাটানোর সুযোগটা হয়েছিল আমার।

তিনি বাংলাদেশের ত্রিপুরা সাহিত্যের দিকপালখ্যাত শ্রীমৎ খুসী কৃষ্ণ ত্রিপুরা ও শ্রীমতি ধবলক্ষী ত্রিপুরার দ্বিতীয় সন্তান। তৎকালীন রামগড় মহকুমার ২৩৮ নং গাছবান মৌজার অন্তর্গত (বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলা সদরের অদূরে) তৈচাই পাড়ার দক্ষিণ সীমার পাহাড় অঞ্চল মানদুই লক্ষীফা পাড়ায় ১৯৩৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রোজ শনিবার  তাঁর জন্ম।

পিতা শ্রীমৎ খুসী কৃষ্ণ ত্রিপুরা
জন্মের প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর অতি অল্প বয়সে ১৯৩৬ সালে পিতামাতার সাথে চলে যান বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর নামক এলাকায়। একটি নতুন পরিবেশের সাথে পরিচয় হলো তাঁর। পিতার ধর্মীয় ভাবুক মন এবং পিতার উপর নির্ভরতা একটি নতুন পরিস্থিতির জন্ম দেয়। তবুও পরিস্থিতির নিকট হার মানেন নি তিনি। অনেক চড়াই উৎড়াইয়ের পর আবার ফিরে আসেন নিজ ভূমিতে।  প্রায় ৭ বছর ত্রিপুরায় বাল্য জীবন অতিবাহিত করার পর ১৯৪২ সালে ১০ বছর বয়সের সময় পূর্ব বাসস্থান গাছবান এলাকায় ফিরে এসে ভর্তি হন গাছবান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৪৩  সালের দুর্ভিক্ষ, স্বদেশী আন্দোলনে জড়িত থাকার দায়ে পিতার পলায়ন, ১৯৪৪ সালে মেঝ বৌদি (শ্রী বিষ্ণু দয়ালের স্ত্রী শ্রীমতি নয়নতারা ত্রিপুরা) এর মৃত্যু ইত্যাদি নানা দুর্যোগ অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৪৬ সালে নিম্ন প্রাইমারী পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে জেনারেল বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে খাগগড়াছড়ি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালে উচ্চ প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করে আরো দুই বছরের জন্য বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫০ সালের মাধ্যমিক বৃত্তি পরীক্ষায়ও তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে রামগড় হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে ভর্তি হয় নবম শ্রেণিতে। ঐ বছরই পড়াশোনার খরচ যোগানোসহ বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে নবম শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ১৯৫৩ ইং সনের ২৫ নভেম্বর রোজ সোমবার তৎকালীন রামগড় মহকুমার তৈলাইফাং নিবাসী শ্রী নবদ্বীপচন্দ্র ত্রিপুরার বড় মেয়ে শ্রীমতি মঙ্গলপ্রভা ত্রিপুরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর গ্রামের বাড়ি গাছবানের তৈচাইপাড়ায় ৬ মাস অবস্থানের পর ঐ গ্রামে থাকার ব্যাপারে স্ত্রীর অসম্মতির কারণে স্বপরিবারে চলে যান তৈলাইফাং এর শ্বশুড়বাড়িতে। তিনি ১৯৫৪ সালের মে মাসের দিকে আবার রামগড় হাইস্কুলে অধ্যয়ন শুরু করেন। কিন্তু পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করার মতো কেউ ছিল না বিধায় বাড়িতে ফিরে আসতে হয় আবার। পরবর্তীতে অনেক চড়াই উৎড়াইয়ের পর উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কিছুদিন তবলছড়ি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৫৮ সারের জানুয়ারী ২৬ তারিখে রাঙ্গামাটিতে পল্লী কৃষি উন্নয়ন সংস্থায় চাকুরীর জন্য সাক্ষাৎকার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হওয়ার পর ১৯৫৮ সালের মার্চ মাসের ১৩ তারিখে ১ বছরের ভিলেজ এইড ট্রেনিং এর জন্য ঢাকার অভিমুখে রওনা হন । 
 
 শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা ও সহধর্মিনী শ্রীমতি মঙ্গলপ্রভা ত্রিপুরা
উল্লেখ্য, ঢাকায় যাওয়ার পূর্বে ১৯৫৭ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথম সন্তান পুত্র শ্রী ধ্রুব নারায়ন ত্রিপুরার জন্ম হয়। অনেক সুখবর নিয়ে ঢাকায়  গেলেও হঠাৎ একটি সংবাদ তাকে খুব ব্যাথিত করে। ঢাকায় যাওয়ার পর ঐ বছরই ১৭ মার্চ মাতৃবিয়োগ এবং একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ভ্রাতা শ্রী অশ্বিনী কুমার ত্রিপুরা (মাতার পূর্ব সংসারের পুত্র) ইহধ্যাম ত্যাগে তিনি খুবই মর্মাহত হন। বছরের নানা ঘাট প্রতিঘাট উপেক্ষা করে তিনি ১৯৫৯ সালের ১ মার্চ V-AID Training এ উত্তীর্ণ হয়ে চলে আসেন। অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৯ খ্রি: তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রামগড় পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন। পরের বছর ১৯৬০ সালের ৬ ডিসেম্বর (২০ অগ্রহায়ন, ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ) মঙ্গলবার বেলা ৪ ঘটিকার সময় দ্বিতীয় সন্তান শ্রীমতি শেফালিকা ত্রিপুরার জন্ম হয়। কিন্তু এমন সুখের মধ্যে আবার একটি দুসময় এসে হাজির। ১৯৬১ সালের ২৭ মে (১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ) শনিবার বেলা প্রায় ১১ টার সময় তাঁর শ্বশুড়ের মৃত্যু ঘটে এবং পুনরায় নেমে আসে আরেক কালো অধ্যায় । তিনি পরবর্তীতে ঐবছরই পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গামাটি সদরে ইউনিয়ন কৃষি সহকারী হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করেন। পোস্টিং প্রদান করা হয় কাউখালীতে (বর্তমানে রাঙ্গামাটির একটি উপজেলা) । তিনি কাউখালীতে ৮ মাস চাকুরী করার পর ১৯৬২ সালের ২৮ মে ওহ ঝবৎারপব ঞৎধরহরহম এর জন্য ঢাকায় চলে যান। ট্রেনিং শেষ করে ২৪ আগস্ট কর্মস্থল কাউখালীতে যোগদান করেন। তিনি সেখানে পরিবার নিয়ে যান ১৯৬৩ সালের ২৪ জানুয়ারী। পরিবার নিয়ে যাওয়ার ২০ দিনের মাথায়  তাঁর বড় বোন শ্রীমতি প্রভালক্ষী ত্রিপুরা (মাতার পূর্বের সংসারের বড় সন্তান) ১৯৬৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় ইহলোক ত্যাগ করার সংবাদ তাঁকে খুবই ব্যথিত করে। তবু নিয়তির দোহায় দিয়ে সেখানে তিনি ২ বৎসর ৬ মাস চাকুরী করেন। পরবর্তীতে তাঁকে কাউখালী থেকে নানিয়ারচড়ে বদলি করা হলে তিনি ২১ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ নানিয়াচড়ের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। মূলত, নানিয়ারচড়ে থাকাকালীন সময়েই তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি মঙ্গলপ্রভা ত্রিপুরার স্ত্রীরোগজনিত অসুস্থতা বৃদ্ধি পেলে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। নানিয়ারচড়ে ৩ বছর ৬ মাস চাকুরী করার পর ২৪ জুন, ১৯৬৭ খ্রি: তারিখে নতুন কর্মস্থল বুড়ীঘাট ইউনিয়নে যোগদান করেন। সেখানে অনেকদিন চাকুরী করার পর ৭ মে, ১৯৭০ খ্রি: তারিখে ছাড়পত্র নিয়ে তৎকালীন রাঙ্গামাটি থানা থেকে নতুন কর্মস্থল রামগড় থানায় ১৩ মে, ১৯৭০ খ্রি: তারিখে যোগদান করেন। অতঃপর ১৯ মে, ১৯৭০ খ্রি: তারিখে তবলছড়ি ইউনিয়নে নতুন কর্মস্থলে যোগদান ছিল তাঁর জীবনে একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস। কিন্তু সেখানেও বেশিদিন শান্তিতে থাকা সম্ভব হয়নি তাঁর। এবারে পরিবারের ব্যয়ভার সব নিজ কাঁধে এসে পড়ে এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘদিন চাকুরী থেকে অব্যাহতির পর পুনরায় ১৫ মে, ১৯৭১ খ্রি: তারিখে রাঙ্গামটি গিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন তাঁর ভ্রাতা শ্রী কৃষ্ণদয়াল ত্রিপুরা। ফলে এই নির্যাতন সইতে না পেরে ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি (১৩৭৮ বাংলার ১২ মাঘ) তাঁর বড় ভাই শ্রী কৃষ্ণদয়াল ত্রিপুরার মৃত্য ঘটে। স্বাধীনতার পর পর তিনি তবলছড়ি এবং বেলছড়ি ইউনিয়নের ত্রাণ কার্য্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য রিলিফ অফিসার এবং ইউনিয়ন প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন।

শ্রী গোপালকৃষ্ণ ত্রিপুরা যখন বেলছড়িতে রিলিফ কাজে ব্যস্ত ছিলেন তখন ১৯৭৪ সালের ২৬ মে (১৩৮১ বঙ্গাব্দের ১২ই জ্যৈষ্ঠ) তাঁর বড় দিদি শ্রীমতি হরপ্রিয়া ত্রিপুরা মাকুমতৈসা গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরার জীবনে শোক বৃদ্ধি পায়।

পরবর্তীতে কয়েক মাসের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৭৪ সারের ৩ অক্টোবর (১৩৮১ বঙ্গাব্দের ১৬ই আশ্বিন) রোজ বৃহস্পতিবার তাঁর একমাত্র কন্যা শ্রীমতি শেফালিকা  ত্রিপুরার সাথে গোমতীর মাকুমতৈসা মৌজার হাজাপাড়া নিবাসী শ্রী কেশব কুমার ত্রিপুরা মহাজনের পুত্র শ্রী অলিন্দ্র লাল ত্রিপুরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

শ্রী অলিন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও শ্রীমতি শেফালিকা ত্রিপুরা
তাঁদের সংসারে প্রথম সন্তান হিসেবে ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ খ্রি: (১ আশ্বিন, ১৩৮২ বঙ্গাব্দ) বুধবারের শেষ রাত্রিতে জন্ম গ্রহণ করেন শ্রীমতি গীতিকা ত্রিপুরা। দ্বিতীয় সন্তান শ্রী বিনোদন ত্রিপুরার জন্ম হয় ১৯৭৭ ইং সনের ৯ আগস্ট (২৪ শ্রাবন, ১৩৮৪) । প্রায় বছর চারেক পর ২৫ জুলাই ১৯৮১ খ্রি: তারিখে তৃতীয় সন্তান শ্রীমতি লিপিকা ত্রিপুরার জন্ম হয়। শ্রীমতি শেফালিকা ত্রিপুরার গর্ভে ১৯৮৪ সালের ২৩ জানুয়ারী(১৩৯০ বঙ্গাব্দের ৮ মাঘ) রোজ সোমবারবিকাল ৫ ঘটিকার সময় ৪র্থ সন্তান শ্রীমতি পিপিকা ত্রিপুরা জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীমতি শেফালিকা ত্রিপুরা বর্তমানে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে  তিনি খাগড়াপুর মহিলা কল্যান সমিতির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর স্বামী শ্রী অলিন্দ্র লাল ত্রিপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। 

অপরদিকে শ্রী ধ্রুব নারায়ন ত্রিপুরা ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর বিএ ভর্তি হন চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজে। তিনি প্রথম বর্ষ শেষ করার পর মাটিরাঙ্গা নিবাসী শ্রী মনীন্দ্র ত্রিপুরার কন্যা শ্রীমতি জুলেখা ত্রিপুরার সাথে ১৯৮৪ সালের প্রথম দিকেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । বিবাহ করার পর তাঁর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন তাঁর পরিবারসহ তিনি পিতা গোপালকৃষ্ণ ত্রিপুরার সাথেই বসবাস অব্যাহত রাখেন। তাঁদের সংসারে ১৯৮৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী (১৪ ফাল্গুন, ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ) রোজ শুক্রবার বেলা ১২ ঘটিকার সময় জন্মগ্রহণ করেন বড় ছেলে শ্রী সুরঞ্জিত ত্রিপুরা। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে শ্রী ধ্রুব নারায়ন ত্রিপুরা খাদ্য বিভাগে চাকুরীতে যোগদান করেন রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়িতে। আবার ১৯৮৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর (১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ৫ আশ্বিন) রোজ বুধবার বিকাল ৪:৩০ ঘটিকার সময় দ্বিতীয় সন্তান শ্রীমতি ঈষিতা ত্রিপুরা জন্মগ্রহণ করলে পরিবারে নেমে আসে শান্তির সুবাতাস। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর চাকুরীজনিত সমস্যার কারণে সাসপেনশনে যেতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ অনেক বছর পর ২৪ আগস্ট, ২০১০ খ্রি. তারিখ রোজ মঙ্গলবার শ্রী জয়জিৎ ত্রিপুরা ছোট ছেলে হিসেবে তাঁদের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন।  

স্বপরিবারে শ্রী ধ্রুব নারায়ন ত্রিপুরা

শ্রী গোপালকৃষ্ণ ত্রিপুরা ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বদলী জনিত কারণে স্ত্রী সন্তান সহ রামগড় চলে যান। ফলে রেখে যেতে হয় পিতাসহ পিতার পরিবারকে। এভাবে পুনরায় পৃথকতা ঘটে যায় পিতা ও পুত্রের মধ্যে। ১৯৭৮ সালের আগস্টের প্রথমদিকে সৎ ভাই শ্রী যোগানন্দ ত্রিপুরার বিবাহ হয় এবং ১৯৭৮ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে শ্রী গোপালকৃষ্ণ ত্রিপুরার দ্বিতীয় সন্তান জন্মের প্রায় ১৮ বছর পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করেছিল। কিন্তু দুভার্গ্যবশত জন্মের সময় কন্যা শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এর পর থেকে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি মঙ্গলপ্রভা ত্রিপুরা আরো শারীরীকভাবে ও মানসিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের নভেম্বর মাসে থানা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে প্রমোশন পেয়ে তিনি বদলী হয়ে যান বিলাইছড়িতে এবং সেখানে ৩ মাস চাকুরী করার পর প্রেষণে চলে আসেন মাটিরাঙ্গা  থানায়।  ১৯৮৩ সালের জানুয়ারী মাসে শাশুড়ীর মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েন তিনি।

১৯৮৩ সালের জানুয়ারী মাসে শ্রীমৎ খুসী কৃষ্ণ ত্রিপুরা প্রায় সপ্তাহ খানেক সময় তাঁর সাথে ছিলেন । তখন তিনি কিছুটা শারীরীক দুর্বলতা ও অসুস্থ ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার তবলছড়িস্থ লক্ষীপাড়ায় চলে যান।

তিনি ২৯ এপ্রিল, ১৯৮৪ খ্রি: তারিখে মাটিরাঙ্গা থেকে খাগড়াছড়িতে বদলী হয়ে আসেন এবং সেখানে মোটামুটি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে জন্ম হয় নাতি-নাতনীর। খাদ্য বিভাগে চাকুরী লাভ করেন বড় ছেলে। সবকিছু মিলিয়ে কিছুটা সুখে-শান্তিতে দিন কাটান তিনি। যদিও স্ত্রীর অসুখটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। 

শ্রী গোপালকৃষ্ণ ত্রিপুরা সাথে আলাপচারিতায় আমি

ইতঃপূর্বে পিতা শ্রীমৎ খুসী কৃষ্ণ ত্রিপুরা দীঘিনারার কাটারুং মৌজার রাম রতন কার্বারী পাড়ায় কয়েক বছর অস্থান করেন স্ত্রী ও দুই নাতিসহ। এই দুই নাতিরা হলেন ইতিপূর্বে ৮ নভেম্বর ১৯৮২ খ্রি: তারিখে ভারতের শরণার্থী শিবিরে মৃত শ্রী যোগানন্দ ত্রিপুরার সন্তান। পরবর্তীতে চলে আসেন বুদ্ধপাড়া অর্থাৎ যোগেন্দ্র কার্বারী পাড়ায়। ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর দীঘিনালার কামাকুটছড়ার বুদ্ধপাড়া অর্থাৎ যোগেন্দ্র কার্বারী পাড়ায় শ্রী গোপালকৃষ্ণ ত্রিপুরার সৎ মা শ্রীমতি অবতার লক্ষী ত্রিপুরার মৃত্যু ঘটলে তাঁর পিতা দুই নাতিসহ চলে আসেন চেঙ্গী ব্রীজের সন্নিকটে শ্রীমতি শেফালিকা ত্রিপুরা ও শ্রী অলিন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে। সেখানে বছরখানেক থাকার পর শ্রীমৎ খুসী কৃষ্ণ ত্রিপুরা ১৯৯৩ সালের ৮ জুন ইহধ্যাম ত্যাগ করেন।

শ্রী গোপাল কৃষ্ণ ত্রিপুরা কৃষি বিভাগ থেকে ১৯৯৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর খাগড়াপুরে স্বপরিবারে দীর্ঘ বছর অবস্থানের পর বিগত ০৬ জানুয়ারি, ২০১৯ খ্রি. তারিখে ইহধাম ত্যাগ করেন।

Post a Comment

0 Comments

এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও ব্যবহার বেআইনি