ওপারে ভাল থেকো জিদু

ভাবনার কোন অংশতে কখনোই জায়গা ছিল না, এভাবে কিছু মহান মানুষকে হারাতে হবে জানি, সারা বিশ্বব্যাপী বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে মারণভাইরাস কোভিড-১৯ যাঁদের লক্ষ্যই মানব জাতিকে পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করা বা ধ্বংস করা তবু এইটুকু বিশ্বাস ছিল যে, অন্তত কাছের কিছু মানুষকে হারাবনা যেহেতু হারাতেও চাইনি কখনও কিন্তু অনেক বেশি নিষ্ঠুর কোভিড-১৯? অনেক মানসিক শক্তিসম্পন্ন মানুষকেও পরাজয় বরণ করে নিতে হয় ঠিক এমনটাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো করোনা, আজ থেকে ঠিক তিন দিন আগে 


বলছি, রাঙ্গামাটির বিশিষ্টজনদের মধ্যে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব সদ্য প্রয়াত আমার পরম শ্রদ্ধেয় জিদু মায়াধন চাকমার কথা রাঙ্গামাটির বিভিন্ন শ্রেণিপেশার খুব কম মানুষই আছেন যাঁরা তাঁকে চিনেন না বা জানেন না তিনি বালুখালী ইউনিয়নের তিন তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছিলেন একসময় তিনি ছিলেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ছিলেন রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের কর্ণধার সমাজের এই মহান মানুষটিকেও হার মানতে হলো পৃথিবীর এক দাপুটে ভাইরাসের কাছে যে মানুষটি এই মহামারির সময়ে সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তুলেছিলেন, যিনি বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন বিভিন্ন সরঞ্জাম, শুধুমাত্র সকলের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ হতে দেবেন না বলে আর সেই মানুষটিকেই পৃথিবী থেকে দ্রুত চিরতরে বিদায় নিতে হলো নিজের সবচেয়ে কাছের পরিবার-পরিজন, যাঁদের কল্যানে বিলিয়ে দিয়েছিলেন সবকিছু সেই সমাজ এবং অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীদের অশ্রুসিক্ত নয়নে রেখে

যেদিন থেকে দেখেছি সেদিন থেকে তাঁকে জিদু সম্বোধন করেই কথা বলতাম মেয়ে পারিকার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই পরিচয় এবং বর্তমানে আমার সহকর্মী সেই দিক থেকে জিদুর সাথে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা তাই পাহাড়ের অনেক বিষয় জানতে সক্ষম হয়েছি এই মানুষটির কাছ থেকে ৮০-৯০ দশকের পাহাড়ের রাজনৈতিক চিত্র অনেকটা নখদর্পনে তাঁর যখনই কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, জানার চেষ্টা করেছি আমিও জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজ করার প্রেক্ষিতে পাহাড়ের সমাজ বাস্তবতার নিদারুণ অভিজ্ঞতাগুলোও নিতান্তই গল্পের ছলে বলতেন অনর্গল খুবই সাদাসিদে এই মহান মানুষটির জীবন-যাপন যেন মাটির মানুষ

বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হয় যে, তিনি আমাদের মাঝে নেই ৩১ জুলাই, ২০২০ খ্রি. তারিখের রাত ১০:০৩ টার সময় যে এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নেওয়ার তাঁর শেষ সময় ছিল তা কেইবা জানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১১ দিন করোনার সাথে তুমুল যুদ্ধের পর এই পরাজয় এই অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে দৃশ্যমান সুস্থ সবল দৈহিক গঠনের অধিকারী একজন মানব যে কতটুকু অসহায় তার জীবন্ত স্বাক্ষী এই ঘটনাটি হয়তোবা ফুসফুস থেকে কিডনি পর্যন্ত দেহের কোন কিছুই বাদ রাখেনি এই করোনা তাই মৃত্যুর মিছিলে নাম লেখাতে হলো জিদুর

 

জিদু ক্ষমা করে দিও আমরা ঠেকাতে পারিনি করোনার অবাধ চলাচল পারিনি আজো সংক্রমণ কমাতে বরং বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত হাতছানি দিয়ে যায় বারংবার কখন, কোথায় এবং কিভাবে থামবে এই করোনার সংক্রমণ? উত্তর এখনও অজানা কিছু কিছু আবিষ্কারের গল্প এখন নিছক একটি কল্পনাপ্রসু স্বান্ত্বনাই মনে হয় জানিনা এভাবে আর কতজনকে যোগ দিতে হবে মৃত্যুর মিছিলে আমরা যদি মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন যে কোন একটি মাসেই এই মারণভাইরাসকে থামাতে পারতাম তাহলে জুলাই মাসের শেষ দিনে এসে তোমাকে হারাতাম না যাহোক, এমন ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে আজ শুধু এইটুকুই বলবওপারে ভাল থেকো জিদু।   বিনম্র শ্রদ্ধা। 

 

 


Post a Comment

0 Comments

এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও ব্যবহার বেআইনি